Introduction
- আপনার গাভী,বকনা বা ষাঁড়ের কি পাতলা পায়খানা আছে?
- কি কি কারনে গরুর পাতলা পায়খানা হতে পারে?
- আপনি কি পাতলা পায়খানার কারন না জেনে উল্টা পাল্টা ঔষধ ও পরামর্শে ক্লান্ত?
গরুর পাতলা পায়খানা (Scouring) একটি জটিল সমস্যা, গরুর পাতলা পায়খানা রোগ ও পেটনামা রোগ হলে কি করনীয় চলুন জেনে নিন। গরুর পাতলা পায়খানা রোগ গুলি পেটনামা ও পেটকামড়ানী বিভিন্ন নামে পরিচিত । এই রোগ হলে খামারিদের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতি হয়ে থাকে। এই রোগটি বিভিন্ন ধরণের সংক্রামক জীবাণু দ্বারা সৃষ্টি হয়ে থাকে। ডায়রিয়া একটি মাল্টিফ্যাক্টোরিয়াল রোগ । আপনার পশুর মধ্যে গুরুতর আর্থিক এবং প্রাণী কল্যাণ প্রভাব ফেলতে পারে। অনুমান করা হয়েছে যে গরুর পাতলা পায়খানা রোগ কারনে বাছুরের মৃত্যুর হার ৭৫% পর্যন্ত তীব্র ডায়রিয়ার কারণে ঘটে ।
যার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। আপনার উল্লিখিত কারণগুলো সঠিক এবং এগুলো সমাধানের জন্য সঠিক ডায়াগনোসিস প্রয়োজন। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
পাতলা পায়খানা রোগের লক্ষণ বা প্রভাব হলোঃ
যখন কোনও প্রাণী দিনে বহুবার জল বা পানির মত পায়খানা করে তখন ডায়রিয়া হয়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত প্রাণীদের নির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে যেমনঃ
- মলের মাধ্যমে তাদের শরীর থেকে জল এবং লবণ হারান। প্রাণী দুর্বল ও পাতলা হয়ে যায় ।
- প্রাণীর ক্ষুধামান্দ্যা দেখা যায় ।
- মলে বা পায়খানার জলযুক্ত শ্লেষ্মা থাকে এবং কখনও কখনও মলের সঙ্গে রক্ত আসে ।
- চিকিৎসা বিলম্বিত হলে দুধ উত্পাদন কমে যায় এবং প্রাণী দুর্বল ও ক্ষতি গ্রস্থ হতে পারে ।
গরুর পাতলা পায়খানার প্রধান কারণসমূহ:
পরজীবী/কৃমির আক্রমণ
রুমেন কৃমি (Paramphistomum), কলিজা কৃমি (Fasciola hepatica), বা অন্যান্য অন্ত্রের কৃমি (Roundworms) পাচনতন্ত্রের ক্ষতি করে, ফলে ডায়রিয়া হয়।
সমাধান: নিয়মিত ডিওয়ার্মিং (Albendazole, Levamisole) ও লিভার ফ্লুকের চিকিৎসা (Triclabendazole) দিতে হবে।
খাদ্যে বিষক্রিয়া বা টক্সিন
ইউরিয়া অতিরিক্ত খাওয়া, নাইট্রেট পয়জনিং, মোল্ডযুক্ত খাদ্য (আফলাটক্সিন), বা বিষাক্ত উদ্ভিদ (কচুরিপানা বেশি খেলে) থেকে বিষক্রিয়া হয়।
সমাধান: খাদ্য পরীক্ষা করে ফ্রেশ ও মানসম্পন্ন খাবার দিতে হবে। অ্যাক্টিভেটেড চারকোল বা টক্সিন বাইন্ডার ব্যবহার করা যেতে পারে।
ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত ইনফেকশন
Salmonella, E. coli, Yersinia, Clostridium, বা Rotavirus/Coronavirus (বাছুরের ক্ষেত্রে) ডায়রিয়া সৃষ্টি করে।
সমাধান: অ্যান্টিবায়োটিক (Neomycin, Oxytetracycline), প্রোবায়োটিক ও ইলেক্ট্রোলাইট স্যালাইন দিতে হবে। ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত (যেমন: Enterotoxemia vaccine)।
খাদ্যে পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা
মিনারেলের অভাব (জিংক, কপার, সেলেনিয়াম) বা অতিরিক্ত মিনারেল (DCP/ডিবি পাউডার ভারসাম্যহীনতা)।
সমাধান: খাদ্যে প্রিমিক্স মিনারেল সঠিক অনুপাতে যোগ করতে হবে। জিংক সাপ্লিমেন্ট (Zinc sulphate) দিতে পারেন।
অম্লতা বা ক্ষারীয়তা সমস্যা
অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট (গম/ভুষি) থেকে রুমেন অ্যাসিডোসিস বা ক্ষারীয় ঘাস (যেমন: ইউরিয়া মিশ্রিত খড়) থেকে সমস্যা হয়।
সমাধান: বাইকার্বোনেট সোডা (Sodium bicarbonate) বা রুমেন বাফার ব্যবহার করুন।
খাদ্যে আঁশের অভাব
শুধু দানাদার খাবার (কনসেন্ট্রেট) দিলে রুমেনের স্বাস্থ্য খারাপ হয়।
সমাধান: খাদ্যে ৩০-৩৫% আঁশ (হে, সবুজ ঘাস, খড়) রাখুন।
পরিবেশগত চাপ
পানিদূষণ, অস্বাস্থ্যকর বাসস্থান বা হঠাৎ খাদ্য পরিবর্তনও ডায়রিয়া তৈরি করে।
ডায়রিয়া থেকে বাছার কিছু সাধারণ উপায়ঃ
- ১. ক্রয়কৃত প্রাণীদের মাধ্যমে এই রোগের প্রবর্তনের বিরুদ্ধে সতর্কতা অবলম্বন করা ।
- ২. ক্লিনিকালি সংক্রামিত প্রাণীদের বিচ্ছিন্ন করুন ও জবাই করুন ।
- ৩. ক্লিনিকাল কেস গুলির সাম্প্রতিক বংশধরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরিয়ে নেওয়া ।
- ৪. জন্মের সাথে সাথে বাঁধ থেকে বাছুর গুলি সরিয়ে ফেলা ।
- ৫. পৃথক বাছুর লালন-পালনের জায়গায় সুন্দর ভাবে তৈরী করা ।
- ৬. পরিষ্কার এবং স্যানিটাইজড দিয়ে গরুকে পরিষ্কার করা ।
- ৭. বালতি দ্বারা বাছুর গুলিকে কলস্ট্রাম খাওয়ানো এবং তারপরে কেবল দুধ প্রতিস্থাপন করে সুন্দর ভাবে দুধ খাওয়ানো ।
- ৮. প্রাপ্তবয়স্ক পশুরদের দূষিত খাবার, জল, বা বিছানাকে দূষণ মুক্ত করুন ।
- ৯. প্রাপ্ত বয়স্কদের কেবল ফসলি জমিতে বা চারণ ভূমিতে সার প্রয়োগ করুন ।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়:
✅ প্রথম পদক্ষেপ: পাতলা পায়খানার রঙ, গন্ধ ও সংগতি পর্যবেক্ষণ করুন (রক্ত বা মিউকাস থাকলে ইনফেকশন সন্দেহ করুন)।
✅ ইলেক্ট্রোলাইট স্যালাইন: ডিহাইড্রেশন রোধে ORS/লবণ-চিনির পানি দিন।
✅ প্রোবায়োটিক: গুড়/দই/বাণিজ্যিক প্রোবায়োটিক (Rumen yeast) হজমশক্তি বাড়ায়।
✅ ঔষধ:
ব্যাকটেরিয়াজনিত হলে → Neomycin, Sulfa drugs
কৃমি হলে → Albendazole/Ivermectin
ফাঙ্গাস/টক্সিন → Toxin binder (Mycofix/Zerotox)
✅ খাদ্য ব্যবস্থাপনা:
২৪ ঘণ্টা খাবার বন্ধ রেখে শুধু পানিতে ORS দিন।
ধীরে ধীরে হাইজেনিক ও সুষম খাবার চালু করুন।
ভুলগুলো থেকে সাবধান!
❌ অকারণে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার → রেজিস্ট্যান্স তৈরি হতে পারে।
❌ খামারের পরিচ্ছন্নতা অবহেলা → সংক্রমণ ছড়ায়।
❌ পুষ্টি বিশেষজ্ঞ/ভেটেরিনারিয়ান না দেখিয়ে নিজে থেকে চিকিৎসা → সমস্যা জটিল হয়।
সর্বোত্তম পরামর্শ:
- স্থানীয় ভেটেরিনারিয়ান বা পশু পুষ্টিবিদ-এর সাথে রেশন চার্ট ও চিকিৎসা পরিকল্পনা করুন।
- খামারে বায়োসিকিউরিটি (পরিষ্কার পানি, জীবাণুমুক্ত খাদ্য পাত্র) মেনে চলুন।
Comments
No comments yet. Be the first to comment!